সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি:
গত ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ইং তারিখে রাত আনুমানিক ১১.৩০ ঘটিকার দিকে লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার মান্দারি বাজারের দ্বীন ইসলামের ফার্নিচারের দোকানের নকশার কারিগর রিয়াজ হোসেন (২৮) নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজ হন। নিখোঁজের দুই দিন পরেও তাকে পাওয়া না গেলে ভিকটিমের মা খুরশিদা বেগম গত ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ইং তারিখে সন্তান উদ্ধারের বিষয়ে র্যাবের সহযোগিতা কামনা করেন। এ প্রেক্ষিতে র্যাব-১১, সিপিসি-৩ ভিকটিমকে উদ্ধারের বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। এরই সূত্র ধরে, মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব-১১, সিপিসি-৩ এর একটি চৌকশ আভিযানিক দল গত ১৭/০২/২০২৩ ইং তারিখ ভোর রাতে হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী মোঃ কাউছার হোসেন (২৭), পিতা- আবু তাহের, মাতা- ছায়েরা বেগম, সাং- জাদিয়া (পানা মিয়ার বাড়ী), ০১নং ওয়ার্ড, ১৪নং মান্দারি ইউপি, থানা- চন্দ্রগঞ্জ, জেলা- লক্ষ্মীপুর কে আটক করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে, সে অপহৃত রিয়াজ হোসেন ল²ীপুর জেলার মান্দারি বাজার এলাকায় একটি ভবনের নীচ তলার কক্ষে আটক আছে বলে জানায়। র্যাব-১১ এর আভিযানিক দল আসামীর তথ্য অনুযায়ী বর্ণিত সেই কক্ষ হতে ভিকটিম রিয়াজ হোসেন এর রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার পূর্বক চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশের নিকট হস্থান্তর করে। আসামী মোঃ কাউছার হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত তার সহযোগী অপর আসামী মোঃ রাকিব হোসেন এর নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে এবং আসামী আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান করছে বলে জানায়। ধৃত মোঃ কাউছার হোসেন এর দেয়া তথ্য মতে র্যাব-১১ ও র্যাব-৭ এর যৌথ অভিযানে ১৭/০২/২০২৩ইং তারিখ রাতে চট্টগ্রাম শহরের একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ রাকিব হোসেন (২৫) পিতা- মৃত রুহুল আমিন, মাতা- দেলোয়ারা বেগম, সাং- বিনোদধর্মপুর, ০৩নং ওয়ার্ড, পুরাতন তারিগঞ্জ ইউপি, থানা- লক্ষ্মীপুর সদর, জেলা- লক্ষ্মীপুরকে গ্রেফতার করা হয়।
আসামীদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা পরিকল্পিত ভাবে এই হত্যাকান্ড ঘটায়। আসামী কাউছার ও ভিকটিম পূর্ব পরিচিত এবং তারা একই ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতো। আসামী কাউছারের বাড়িতে ভিকটিমের আসা-যাওয়া থাকায় কাউছার এর স্ত্রীর সাথে ভিকটিমের সখ্যতা গড়ে উঠে। এ প্রেক্ষিতে আসামী কাউছার ভিকটিম রিয়াজ এর সাথে তার স্ত্রীর অনৈতিক সর্ম্পক রয়েছে বলে সন্দেহ পোষণ করে। যার ফলশ্রুতিতে ভিকটিমের প্রতি আসামী কাউছারের ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক প্রায় দুই মাস পূর্বে আসামী কাউছার ভিকটিম সহ লক্ষ্মীপুরর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন মান্দারি বাজারস্থ উম্মে সালমা ভবনের নীচ তলায় একটি রুম ভাড়া নেয়। আসামী কাউছার তার পরিকল্পনার বিষয়ে অপর আসামী রাকিব হোসেন (২৫) এর সাথে আলোচনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন গত ১৪/০২/২০২৩ ইং তারিখে রাতে ভিকটিমকে রুমে ডেকে আনে এবং পরিকল্পনা মোতাবেক আসামী কাউছার ভিকটিমের খাবারের সাথে চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে অচেতন করে ফেলে। পরবর্তীতে ভিকটিমের হাত-পা বেঁধে মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে এবং নাক ও মুখে গামছা পেচিয়ে শ্বাস রোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আসামীদ্বয় রুমটি বাহির থেকে তালাবদ্ধ করে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়।
আসামীদ্বয়কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তারা গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে লক্ষ্মীপুর সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনের চেষ্টা করে। র্যাব দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে আসামীদ্বয়কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের রিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।