নারায়াণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ২

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এলাকায় চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার সঙ্গে যুবলীগ কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দুই যুবলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উপজেলার গোলাকান্দাইল নতুনবাজার এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের নতুনবাজার এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে মাসুম বিল্লাহ ও একই এলাকার মো. মিলনের ছেলে মো. জুবায়ের। তাঁরা গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিনের অনুসারী।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া দুই ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে দুজনের শরীরের নিম্নাংশে গুলি লেগেছে। অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়েছে। বর্তমানে একজন চিকিৎসাধীন। চিকিৎসা শেষে আরেকজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন যুবলীগের কর্মী মো. মাসুম বিল্লাহ ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহিদ হাসান ওরফে বিদ্যুতের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করেছে।

এ বিষয়ে ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান  বলেন, দুটি পক্ষের মধ্যে আগে থেকে বিরোধ চলছিল। মাসুম বিল্লাহ স্থানীয়ভাবে যুবলীগের পরিচয় দেয়। তাঁর বিরুদ্ধে ১০টির বেশি মামলা আছে। অন্যদিকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জাহিদ হাসানও একাধিক মামলার আসামি। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে দুটি পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। দোষীদের আটকের চেষ্টা চলছে।

স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোলাকান্দাইল ও ভুলতা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিনের সঙ্গে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহিদ হাসান ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রাজন চৌধুরীর দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। বৃহস্পতিবার রাতে আল আমিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত মাসুম বিল্লাহ গোলাকান্দাইলের নাগেরবাগ এলাকায় একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে চাঁদা তুলতে যান। বিষয়টি জানতে পেরে জাহিদ হাসান তাঁর অনুসারীদের নিয়ে এসে মাসুম বিল্লাহকে মারধর করে এলাকা থেকে চলে যেতে বলেন।


এ ঘটনার পর মারধরের শিকার মাসুম বিল্লাহ জোবায়েরসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে এসে জাহিদ হাসানের ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় মাসুম বিল্লাহ ও জোবায়ের গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ভুলতা ফাঁড়ির পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই এলাকার একজন আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে  সংঘর্ষের সময় সাধারণ মানুষের দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। গোলাগুলির সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতের সংঘর্ষের জেরে আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রাজন চৌধুরী লোকজন নিয়ে এসে গোলাকান্দাইল ৫ নম্বর ক্যানেল এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা কাজল গাজীর বাড়ির সামনে গুলি চালান। কাজল গাজী বলেন, তাঁর বাড়ির এক ভাড়াটে বৃহস্পতিবার রাতে মাসুম বিল্লাহর পক্ষে সংঘর্ষে অংশ নিয়েছিলেন অভিযোগ তুলেছিলেন রাজন চৌধুরী। তিনি বাড়িতে এসে অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে বাড়ির সামনে ফাঁকা গুলি ছুড়ে চলে যান।

 একটি ভিডিওতে রাজন চৌধুরীকে ফাঁকা গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। সকালে গুলি করার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজন চৌধুরী‘লোকজন বলতেছে আমি গুলি করছি। আসলে এটা মিথ্যা। আমি চার বছর ধরে এলাকায় যাই না।’

গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন মুঠোফোনে , ‘ঘটনার আগে-পরের কিছুই জানি না। শুধু জানি, বিদ্যুৎ (জাহিদ হাসান) ও তার অনুসারীরা আমার দুই কর্মীকে গুলি করছে। পরে আমার ভাতিজার কাছে খবর শুনে ঘটনাস্থলে যাই।’

এসব বিষয়ে গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম  মাসুম বিল্লাহ ও জুবায়ের যুবলীগের সক্রিয় কর্মী। জাহিদ হাসান ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। রাজন চৌধুরী একসময়ের ছাত্রলীগের নেতা। বৃহস্পতিবার রাতের সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ‘নাগেরবাগে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে শুনছি। দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু সংঘর্ষের কারণ বলতে পারছি না। নির্বাচনের আগে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ দলের ক্ষতি করছে।’

মতামত দিন

বিজ্ঞপ্তি
সবার আগে সব খবর পেতে ভিজিট করুন - voiceofnarayanganj.com I যে কোন সংবাদ বা বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন - 01963958226 / 01819136738 অথবা মেইল করুন - [email protected]