প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জে হত্যা মামলার আসামি রুবেল মেম্বার
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে ও অস্ত্র নিয়ে হামলা করে মিনারুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে গোগনগর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. রুবেল ওরফে রুবেল মেম্বার সহ তার সহযোগি আনছার। সাবেক সংসদ সদস্য এমপি শামীম ওসমান ও তার পুত্র অয়ন ওসমানের নেতৃত্বে তারা আন্দোলনকারীদের উপরে গুলি ছুড়ে ও অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এই ঘটনায় নিহতের ভাই নাজমুল হক বাদী হয়ে ১৩০ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত আরও ২০০- ৩০০ জনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই আসামিদের তালিকায় ১৫ ও ১৬ নম্বর আসামি হিসেবে গোগনগর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. রুবেল ওরফে রুবেল মেম্বার ও আনছারের নাম রয়েছে। মূলত এমপি শামীম ওসমান ও গোগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজর আলীর শেল্টারে তারা এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সেই দাপটে বিগত সময়ে গোগনগর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার দৌলত হোসেনকে হত্যা করে খুনের আসামি হয়েছেন এই রুবেল মেম্বার ও আনছার গং। তবে এখনো তারা ধরা ছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এখনো প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সরকার আমলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তার ভাই সেলিম ওসমানের আর্শিবাদে অনেকটা জোর করে গোগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বনে যান ফজর আলী। এই ফজর আলী গোগনগর ইউনিয়নে ত্রাশের রাজনীতি কায়েম করতে ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে আপন ভাতিজি জামাতাকে নির্বাচনে ফেল করিয়ে তার সহচর হিসেবে পরিচিত ও খুনের আসামি রুবেল মেম্বারকে নির্বাচিত করান। এরপর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর রুবেল মেম্বারকে প্যানেল চেয়ারম্যান বানানো হয়। এতে ধীরে ধীরে বেপরোয়া হয়ে উঠে রুবেল মেম্বার। স্থানীয় বঙ্গবন্ধু হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হন ফজর আলী ও সদস্য নির্বাচিত হন রুবেল মেম্বার। মহামারী করোনার সময়ে এম এ ব্যাপারী ডকইয়ার্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক আহাম্মদ বেপারী ১১ জন ওয়ারিশ রেখে মৃত্যুবরণ করলে ৫ জন ওয়ারিশ থেকে উক্ত ডকইয়ার্ডের ৫ একর জায়গা নামমাত্র মূল্যে ভাড়া নেয় চেয়ারম্যান ফজর আলী। এতে তার সন্ত্রাসী বাহিনী রুবেল মেম্বার ও তার অনুসারী আনছার ও রবিন ১০ কোটি টাকা মূল্যের দুটি জাহাজ জোরপূর্বক নিয়ে নেয়। তবে ওই ডকইয়ার্ডের বাকি ৬ জন ওয়ারিশকে না জানিয়ে এই অবৈধ লেনদেন হয়েছে। এছাড়া সেই প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকার অন্যান্য বিভিন্ন মালামাল তারা আত্মসাৎ করে। বিষয়টি টের পেলে ওই ৬ জন ওয়ারিশদের সঙ্গে ফজর আলীর অনুসারী রুবেল মেম্বর গংদের সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই বিরোধ মিটমাট করার জন্য এলাকার গণমান্য ব্যক্তি হিসেবে দৌলত মেম্বারের কাছে বিচার দেন ওয়ারিশরা। এতে প্রতিবাদ করে সুষ্ঠু বিচার করার সিদ্ধান্ত নিলে পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায় দৌলত মেম্বার। এই বিরোধ থেকে ২০২২ সালের ২৬ জুন রাতে দৌলত মেম্বারকে হত্যা করে রুবেল গং। এরপর তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলে বিভিন্ন সময় হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। এর জের ধরে গত ৫ আগস্ট দৌলত মেম্বারের ছেলে ফয়সালের ব্যবসায়ীক কার্যালয় সম্রাট কন্সট্রাকশন অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর সহ বিভিন্ন মালামাল লুটপাট করে এই রুবেল মেম্বার গং। রুবেলে বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলা সহ ১৪টি মামলা রয়েছে।
এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২০ জুলাই সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও তার পুত্র অয়ন ওসমান সহ গোগনগর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. রুবেল ওরফে রুবেল মেম্বার ও আনছার সহ অন্যান্য আসামিদের নেতৃত্বে ৩০০-৪০০ জন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বন্দুক, শটগান, পিস্তল, তলোয়ার, রামদা, চাপাতি সহ অত্যাধুনিক দেশি ও বিদেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছাত্র জনতাকে প্রতিহত করার চেষ্টাকালে আদমজী রোডের আল আমিন নগর পাওয়ার হাউজের সম্মুখে তাদের হাতে থাকা ককটেল বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে ঘটাতে সামনের দিকে আগাতে থাকে। এ অবস্থায় আসামিরা তাদের সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে চারদিকে গুলি ছুড়তে থাকে। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টায় মুজিব ফ্যাশনের সম্মুখে ভুক্তভোগি ও গার্মেন্ট কর্মী মিনারুল ইসলাম উপস্থিত হলে হামলাকারীদের সামনে পড়ে যায়। এ সময় সে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনায় মামলা হলে রুবেল মেম্বার ও আনছারকে আসামি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রুবেল মেম্বার ও আনছার গং এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাদক ব্যবসা, চুরি ও সন্ত্রাসীপনা সহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে। অথচ তাদের শেল্টারদাতা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামি হলে গোগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজর আলী বিদেশে পলাতক রয়েছে। তবুও ফজর আলীর সাথে গোপনে আতাঁত করে অপরাধ সাম্রাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে রুবেল গং।
মতামত দিন