বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত তৈমুরের বিরুদ্ধে জুতা পেটা করার স্লোগান
বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও মামলার বাদী তৈমুর আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে জুতা মিছিল করেছে বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা। মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানকে ফাঁসানো হয়েছে বলে ক্ষোভ ঝারেন নেতাকর্মীরা।
রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় নেতাকর্মীরা বলেন, ‘তৈমুরের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে, মীরজাফরের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে। ’ পরে জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দরা এসে নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সরকার হুমায়ুন কবির বলেন, এই মামলার ১৪ জন সাক্ষীর কেউ বলেনি জাকির খান এই ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে। পুলিশ তাদেরকে জোর করে এই মামলার সাক্ষী করেছে। এমনকি তাদেরকে না জানিয়ে সাক্ষী করা হয়েছে। ফলে জাকির খান খুব শীঘ্রই এই মামলা থেকে খালাস পাবেন বলে আমরা আশাবাদী। এই মামলায় হাইকোর্ট থেকে একটা রোল ইস্যু করা আছে, ৬ মাসের মধ্যে মামলার শুনানি করে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। সেই ৬ মাস প্রায় শেষ পর্যায়ে। ফলে আর কয়েকটা তারিখ পরে, আপনাদের নেতা জাকির খান আপনাদের কাছে চলে আসবে,ইনশাআল্লাহ।
আদালতপাড়ায় ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এটা কোর্ট আপনারা সুশৃঙ্খল থাকবেন, ধৈর্য্য রাখবেন। শুধুমাত্র একটু সময়ের ব্যাপার। আপনাদের জাকির খান আপনাদের কাছে চলে আসবেন। একটু অপেক্ষা করুন।
এই দিন দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ উম্মে সরাবন তহুরার আদালতে সাক্ষী ও শুনানী হয়েছে। সেখানে জাকির খানের অনুপস্থিতিতে দুজন সাক্ষীদের জেরা করা হয়।
সাক্ষীরা হলেন- তাইজুল ইসলাম, জামাল হোসেন।
এ বিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. রবিউল হোসেন বলেন, বিগত ১১ বছরে এই মামলায় মাত্র ১৪ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও সাক্ষী আনতে পারছে না। আজকে দুজন সাক্ষী আদালতে হাজির করা হয়েছে। তবে এসব সাক্ষীরা আদালতে বলেছেন, ‘তারা এই মামলার বিষয়ে কিছু জানেনা, কিছুই দেখেনি।’
সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুইটা সাইনবোর্ড জব্দ করা হয়েছে উল্লেখ করে দুজন সাক্ষীকে আনা হয়েছিল। সেই সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, খান সাহেব চায় কি, জনগণের শান্তি।’ এছাড়া সেই সাইনবোর্ডে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবির সাথে জাকির খানের ছবি ছিল। এটিও সাক্ষীরা দেখেনি বলে জানিয়েছেন। এই সাক্ষীদের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়েছে, তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না। তারা দুজনে কোতোয়ালী থানার সামনের চায়ের দোকানি। এই ঘটনায় ফতুল্লা থানায় মামলা হলেও সাক্ষীরা হলেন কোতোয়ালী থানার। এটা খুব হাস্যকর বিষয়। জাকির খানের জামিন চাইলে আদালত আরও কিছুদিন সময় নিতে বলেছেন।
এর আগে, সকাল থেকে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের মুক্তির দাবিতে সকাল থেকে আদালত পাড়ায় দলে দলে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে তার কর্মী- সমর্থকরা। এ সময় তারা স্লোগানে স্লোগানে আদালতপাড়া প্রকম্পিত করে।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার। এ হত্যাকান্ডের পর তার বড় ভাই তৈমূর আলম বাদি হয়ে ১৭ জনকে আসামী করে ফতল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর মোট ৯ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তিতে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়।
সিআইডির এএসপি মসিহউদ্দিন দশম তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস তদন্ত শেষে তিনি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারী আদালতে ৮ জনকে আসামী করে চার্জশীট দাখিল করেন। এতে মামলা থেকে গিয়াসউদ্দিন, তার শ্যালক জুয়েল, শাহীনকে অব্যাহতি দিয়ে সাবেক ছাত্রদল সভাপতি জাকির খান, তার দুই ভাই জিকু খান, মামুন খানসহ মোট ৮ জনকে আসামী উল্লেখ করা হয়।
সিআইডির এএসপি মসিহউদ্দিন দশম তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস তদন্ত শেষে তিনি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারী আদালতে ৮ জনকে আসামী করে চার্জশীট দাখিল করেন। এতে মামলা থেকে গিয়াসউদ্দিন, তার শ্যালক জুয়েল, শাহীনকে অব্যাহতি দিয়ে সাবেক ছাত্রদল সভাপতি জাকির খান, তার দুই ভাই জিকু খান, মামুন খানসহ মোট ৮ জনকে আসামী উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, এক সময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তৈমুর আলম খন্দকার। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদেও ছিলেন তিনি। পরে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এর কিছুদিন পরে তৃণমূল বিএনপি তে যোগদান করে দলটির মহাসচিব পদ পেয়ে যান। এরপর থেকে বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে বেঈমান ও মীর্জাফর বলে আখ্যা দিয়ে আসছেন। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে বিএনপি দলকে দুর্বল করতে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করে আসছেন।
মতামত দিন