নারায়াণগঞ্জ

বন্ধন পরিবহনে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা করলো হামলাকারীরা, ক্ষুব্ধ মালিকরা

ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী সিটি বন্ধন পরিবহন লি. নামের বাস নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। তবে মাহবুব উল্লাহ তপনের নেতৃত্বে তার লোকজন বর্তমান মালিক পক্ষের লোকজনের ওপর হামলা ও দখলের পরেও মামলা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিটি বন্ধন পরিবহনের বর্তমান মালিকপক্ষ। তারা বলছেন, তপন গ্রুপ দখলদার ও হামলাকারী হয়েও উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আর আমাদের বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও হামলার শিকার হয়েছি।

 এই ঘটনায় সোমাবার রাতে বন্ধন পরিবহনের বর্তমান মালিকপক্ষ মামলা করেছে। সিটি বন্ধন পরিবহন লি.এর পরিচালক সালামতউল্লাহ নাদিম বাদী হয়ে মাহবুব উল্লাহ তপন সহ ১৩ জন এবং অজ্ঞাত আরও ২০০-২৫০ জনকে আসামি করেছেন। এতে তাদের প্রায় ১৫ জন শ্রমিক-কর্মচারী আহত হয়েছে। এই ঘটনায় ৫ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে।

  আসামিরা হলেন- মাহবুব উল্লাহ তপন, সাখাওয়াত হোসেন রানা, হাসান, রুহুল আমিন, নিপ্ত সাহা, বাবুল দেওয়ান, রাসেল, কাশেম, কামাল উদ্দিন মির্জা জনি, হীরা লাল, সুজন, রহিম ও কাইল্যা রাসেল সহ অজ্ঞাত আরও ২০০-২৫০ জনকে আসামি করা হয়।

সিটি বন্ধন পরিবহন লি.এর পরিচালক সালামতউল্লাহ নাদিম মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রোডে সিটি বন্ধন পরিবহন লি. এর পরিচালক হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সহিত পরিবহন ব্যবসা পরিচালনা করে আসতেছি। তবে বিগত কিছুদিন যাবত উল্লেখিত আসামিরা স্থানীয় প্রভাব বিস্তার করে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল অবৈধ দখল করার পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। এ বিষয়ে আমি সহ সিটি বন্ধন লি. এর অন্যান্য বাস মালিকগণ বিবাদীদের বাধা নিষেধ করলে তারা নানান ধরনের ভয়ভীতি সহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। এর ধারাবাহিকতায় গত ২২ সেপ্টেম্বর আসামিরা চাষাঢ়া, যাত্রাবাড়ী, বায়তুল মোকাররম ও গুলিস্তান বাস কাউন্টারে হামলা চালিয়ে কর্মচারীদের মারধর করেছে। একইভাবে ১ নং রেল গেইট কাউন্টারে ভাঙচুর করে ও কর্মচারীদের মারধর করে টিকিট বিক্রির ৮৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। পরে দুপুর ২ টার দিকে তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ওই কাউন্টারে হামলা চালায়। এতে কাউন্টারের সুপারভাইজার মো. শরিফ (৩০), স্টাফ দেলোয়ার হোসেন (৫৬) সহ আরও অনেকে আহত হয়েছেন। এমতাবস্থায় তারা সিটি বন্ধন পরিবহন লি. উচ্ছেদ করে দখল নেওয়া সহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন।

অপরদিকে বন্ধন পরিবহনের পুরাতন মালিক হিসেবে দাবিদার মো. মাহবুব উল্লাহ তপন বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২৮ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে আসামি করা হয়। 


বন্ধন পরিবহন দখলকারী ও হামলাকারীরা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মামলা করেছে বলে দাবি করেন সিটি বন্ধন পরিবহন লি. চেয়ারম্যান মো. শাহাদাত হোসেন খান লিটন। তিনি বলেন, সব ধরনের বৈধ কাগজপত্র আমাদের রয়েছে। এরপরও তারা জোর করে দখল করতে চাইছে। অথচ আরও অনেক আগে তাদের বন্ধন পরিবহন লি. বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এরপরও তারা সিটি বন্ধন পরিবহন লি. অধীনে ছিল। তবে ২০২০ সালে গাড়ির মডেল পরিবর্তন হলে তপন গাড়ি বিক্রি করে চলে যায়। বর্তমানে ৫৪টা গাড়ির ৪২ জন মালিক রয়েছে। এদিকে গত ৫ আগস্টের পরে মালিকরা সবাই মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে চেয়ারম্যান ও দেলোয়ার ভাইকে এমডি করা হয়েছে। 

হামলার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গতকাল সকালে তারা সিটি বন্ধন পরিবহনের কাউন্টারে এসে আলাদা টিকিট ছাপিয়ে গাড়ি চালিয়েছে। আমাদের কাউন্টারের টাকা নিয়ে গেছে। এর আগেও আরেকটা মিথ্যা মামলায় আমাদের জাড়িয়েছে যাতে করে আমরা থানায় যেতে না পারি। এই সুযোগে তারা আমাদের ওপরে হামলা চালিয়েছে। আমাদের ন্যায়ের পক্ষে এবং বিএনপির ভাবমূর্তি রক্ষা করতে জাকির খানের লোকজন তাদের প্রতিহত করেছে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় আমরা মামলা করেছি। শুনেছি এই ঘটনায় তারাও মামলা করেছে। অথচ তারা দখলদার হয়েও আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তবে মামলা নেওয়ার আগে তদন্ত করে মামলা নেওয়া উচিত। কারণ অনেকে হয়রানি করার জন্য মামলা করে থাকে। আমাদের বৈধ কাগজপত্র থাকার ফলে আগামীকাল থেকে আমাদের গাড়ি চলবে। 

বিএনপি দলীয় ক্ষমতার দাপটে তারা বন্ধন পরিবহন দখল করতে চাইছে উল্লেখ করে সিটি বন্ধন পরিবহন লি. এর এমডি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২০২০ সালে গাড়ি সংস্কারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই সময় তারা তাদের গাড়ি বিক্রি করে দেয়। তারা মূলত এখন জোর করে এসব দখল করতে চাইছে। বিএনপির দলের ক্ষমতার জোর দেখিয়ে এ কাজ করছে। তবে আমরা কাউকে চাাঁদা দেবোনা। তারা পরিকল্পিতভাবে হামলা করে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। তারা জবর দখল করতে চাইছে। রং দিয়ে সিটি বন্ধনের নাম মুছে শুধু বন্ধন পরিবহন নামে বাস চালাতে চাইছে। 

প্রসঙ্গত, গত ২২ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বন্ধন পরিবহন বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।

মতামত দিন

বিজ্ঞপ্তি
সবার আগে সব খবর পেতে ভিজিট করুন - voiceofnarayanganj.com I যে কোন সংবাদ বা বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন - 01963958226 / 01819136738 অথবা মেইল করুন - voiceofnarayanganj24@gmail.com