নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে হামলা : দুই পক্ষ সাংবাদিক দুর্বৃত্ত নয়
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে হামলা ও হাতাহাতির ঘটনায় উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে। হামলার ঘটনায় দুই পক্ষ সাংবাদিক হিসেবে এজাহারে উঠে এসেছে। যদিও এই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্থানীয় সাংবাদিক রনির নেতৃত্বে ২০-২৫ জন দুর্বৃত্তরা প্রেসক্লাবে এসে হামলা চালিয়ে সাংবাদিক সহ ৫ জনকে আহত করেছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে স্থানীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের হাতাহাতির ঘটনা দেখা গেছে। তাছাড়া আহত সাংবাদিক মাসুদ রানা রনির সাথে ওই দিন যারা প্রেসক্লাবে ছিলেন তারা সবাই স্থানীয় সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে সাংবাদিক রনির নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে সাংবাদিক সহ অন্তত ৫ জন আহত করেছে বলে দাবি করে প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দরা। প্রেসক্লাবের আহত সাংবাদিক আবু সাউদ মাসুদ বলেন, মাসুদ রানা রনির নেতৃত্বে ২০-২৫ জন দুর্বৃত্ত প্রেসক্লাব দখল করার উদ্দেশ্যে আমার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় প্রেস ক্লাবে উপস্থিত সাংবাদিকরা তাদেরকে বাধা দিতে গেলে আমাকে কিল ঘুষি মারে। প্রেস ক্লাবের টিভি ভাঙচুর করেছে। এই ঘটনায় সাংবাদিক রনিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে এই ঘটনায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এই ঘটনায় উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে। সাংবাদিক রনির পক্ষে রাশেদুল ইসলাম বাদী হয়ে আবু সাউদ মাসুদ সহ জাতীয় গণমাধ্যমের ৬ জন সাংবাদিককে আসামি করে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছে। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের ম্যানেজার মাসুম বিল্লাহ বাদী হয়ে সাংবাদিক রনি সহ স্থানীয় গণমাধ্যমের ১৪ জন সাংবাদিককে আসমি করে সদর মডেল থানায় পাল্টা মামলা করেছে। সেই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রনির নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে সাংবাদিক সহ অন্তত ৫ জন আহত করেছে। এতে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সোজাসাপ্টা পত্রিকার সম্পাদক আবু সাউদ মাসুদ হয়েছেন। তবে মামলার এজাহারে স্থানীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সাংবাদিক রনি সহ একদল স্থানীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও ফটো সাংবাদিকরা লিফট যোগে প্রেসক্লাবে প্রবেশ করে। ওই সময় প্রেসক্লাবের অন্য সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরে কোন একটা বিষয় নিয়ে প্রেসক্লাবের নিউজ রুটে হট্টোগোল শুরু হলে। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সোজাসাপ্টা পত্রিকার সম্পাদক আবু সাউদ মাসুদ ও স্থানীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিক রনির মধ্যে হাতাহাতি ও কিল-ঘুষি মারার ঘটনা ঘটে।
এদিকে গ্রেফতার হওয়া সাংবাদিক মাসুদ রানা রনি গত ৩০ অক্টোবর আদালতে জামিন পেয়েছেন।জামিনে মুক্ত হয়ে পাল্টা অভিযোগ করে সাংবাদিক মাসুদ রানা রনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিকদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। স্থানীয়দের সদস্য পদ দেওয়া হয়না। এই বৈষম্যের কারণে স্থানীয় সাংবাদিকদের সদস্য পদ দেওয়া সহ তিনটি দাবি নিয়ে লিখিত আকারে গতকাল আমরা প্রেসক্লাবে দিতে গিয়েছিলাম। প্রেসক্লাবে যাওয়ার আগে আমি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন ভাইকে ফোন করে অবহিত করে সেখানে গিয়েছি। আমার সেখানে যাওয়ার পরে নিউজরুমে ঢুকার পরে তারা আমাদের কোন কথা শুনেনি, আমাদেরকে এলোপাথারি মেরেছে। আবু সাঈদ মাসুদ, রফিকুল ইসলাম জীবন, জুয়েল, মাহফুজ সহ উপস্থিত আরও অনেকে আমাদের ওপরে হামলা চালায়।দেশী বিভিন্ন অস্ত্র সহ কারেন্ট শর্ক দেওয়ার একটি যন্ত্র ব্যবহার করেছে। তারা আমাকে এমনভাবে আঘাত করেছে, আমি রক্তাক্ত জখম হয়ে মাথায় ৮টি সেলাই লেগেছে। তারা আমাদের মারধর করেই খান্ত হয়নি, উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এমনকি জাতীয় গণমাধ্যম দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে উল্টো নিউজ করানো হয়েছে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে।
এই ঘটনায় খবর নারায়ণগঞ্জ ডটকম অনলাইনের সাংবাদিক জাহিদ হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের দীর্ঘ দিনের দাবি স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের প্রেস ক্লাবে সদস্য পদ দেওয়ার। এই দাবিতে ওই দিন আমরা সাংবাদিকরা প্রেস ক্লাবে গিয়েছিলাম। সেসময় তারা আমাদের ওপর হামলা করে রনি সহ সাংবাদিকদের আহত করেছে।
মতামত দিন