জাকির খান কারাবন্দি হলে ক্ষমতাসীনদের পতন ঘণ্টা বাঁজে
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান বেশ কয়েকবার কারাবরণ করেছেন। বিএনপি থেকে বহিস্কৃত নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই ও ব্যবসায়ী সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন। অথচ হত্যাকাণ্ডের সময় জাকির খান চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য বিদেশে ছিলেন। এমনকি এই মামলার সাক্ষী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ‘ঘটনার সময়ে তারা কেউ জাকির খানকে সেখানে দেখেনি। ফলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে জাকির খান কারাবরণ থাকা অবস্থায় গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ দলটির পতন হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন। দলের অন্য নেতারা গাঁ ঢাকা দিয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন পর বিএনপি দল ফের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। একইভাবে এর আগেও ২০০১ সালে জাকির খান কারাগারে থাকা অবস্থায় তত্ত্বাবধায় সরকারের পতন হয়েছিল এবং বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিল। এতে বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘জাকির খান কারাবরণ করলে বিএনপি দলটি ক্ষমতায় যাওয়ার স্বাদ পায়।’
জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন জাকির খান। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে জাকির খান শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড পেয়ে জেলে যান। কিন্তু প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমায় তিনি মুক্ত হন। সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর নাতি হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাকির খান।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার ৭ মাসের মাথায় সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবির মিথ্যা অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় জাকির খানের ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয় এবং তিনি জেলে যান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার পুরো ৪ বছর জাকির খান থাকেন জেলে। এরপর ১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য জেল থেকে বের হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদটি পেয়ে যান। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিশাল গাড়ী বহর নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করলে ফের কারাবন্দি হন তিনি। তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় ওই বছর ক্ষমতার স্বাদ পান বিএনপি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার প্রায় ৫ মাস পর তিনি কারামুক্ত হন।
২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি থেকে বহিস্কৃত নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই সাব্বির আলম খন্দকার খুন হওয়ার পর এ মামলার আসামি হওয়ায় তিনি নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে থাইল্যান্ডের সুকুমবিকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ’গ্রেস’ নামে ৮তলা বিশিষ্ট একটি থ্রি-স্টার হোটেল কেনেন।
স্থানীয় বিএনপি দলীয় নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাবেক সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে জাকির খানকে বিএনপির রাজনীতিতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করে জেলার সাবেক এক এমপি গিয়াসউদ্দিন ও তার অনুসারীরা। এই গ্রুপটি মূলত তৈমুর আলমের প্রতিপক্ষ গ্রুপ হিসেবে পরিচিত ছিল।
২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর তৈমুর আলম খন্দকার জেলা বিএনপির সভাপতি হওয়ার পর স্থানীয় বিএনপির কর্তৃত্ব তার কাছে চলে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপ তাদের অবস্থান সুসংহত করতেই জাকির খানকে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে বেছে নিয়েছিল। ওই গ্রুপের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল জেলা ও শহর বিএনপির কমিটিতে স্থান না পাওয়া বিতর্কিত কয়েকজন নেতা। এসব গ্রুপের মাধ্যমে সেসময় জাকির খান গোপনে ঢাকায় বিএনপির হাই কমান্ডের কয়েকজনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন বলেও জানা গেছে।
থাইল্যান্ডে হোটেল ব্যবসার মন্দাভাব থাকায় জাকির খান দেশে ফিরে আসতে চাইছিলেন অনেকদিন ধরেই। এ লক্ষ্যে দলের সকল কর্মসূচী ও জাতীয় দিবসগুলোতে দলের পক্ষে মিছিল ও শো ডাউন করে আসছিল জাকির খানের হাজারো লোকজন। তারা জাকির খানের বিশাল ছবি ও ব্যানার বহন করে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে আসছিলেন।
এদিকে ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে জাকির খানকে বিদেশি পিস্তলসহ গ্রেফতার করে র্যাব-১১। সেই অস্ত্র মামলায় জামিনে আছেন তিনি। তবে ব্যবসায়ী সাব্বির হত্যা মামলায় তিনি কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া আরও একটি মামলা তার বিরুদ্ধে রয়েছে।
তবে সাব্বির হত্যা মামলাটি এখন সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এই মামলায় ৫২ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ জাকির খানের বিরুদ্ধে জোরালো কোন সাক্ষী দিতে পারেনি বলে আইনজীবী জানিয়েছেন। আসামি পক্ষের (জাকির খান) আইনজীবী রাজীব মণ্ডল বলেন বলেন, এই মামলায় ১৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে কোন সাক্ষী বলতে পারেনি জাকির খানকে ঘটনাস্থলে দেখেছেন। এমনকি অনেক সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী বলেছে, ’জাকির খানকে তারা চিনেনা।’ তাছাড়া এই হত্যাকাণ্ডের সময় জাকির খান চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মূলত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে তাকে ফাঁসানোর জন্য এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।
মতামত দিন