১১ বছর ধরে সাত খুন মামলার বিচার মেলেনি, আওয়ামী লীগ সরকারকে দুষছেন স্বজনরা
নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার রায় দীর্ঘ ১১ বছরেও কার্যকর হয়নি। বিচার পায়নি নিহতের স্বজনরা। এই মামলায় নিম্ন আদালতে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড সহ ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। পরে উচ্চ আদালতে ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। তবে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ছয় বছর ধরে সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগে মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় আটকে আছে। তবে গত ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর মামলাটির বিচারকাজ বিলম্ব হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী করছেন নিহতের স্বজনরা। এ নিয়ে চরম খোভ দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহরণ হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ সাত জন। তিন দিন পর বন্দর উপজেলায় শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় আলাদা দুটি মামলা করেন।
সেই মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদানের আদেশ দেন।
পরে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন উচ্চ আদালত। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে সাড়ে ছয় বছর ধরে শুনানির অপেক্ষায় আটকে রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে মামলার রায় কার্যকর করতে টালবাহানা করছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নিহতের স্বজনরা। নিহত তাজুল ইসলামের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম রাজু বলেন, আসামিরা আওয়ামী লীগের সরকারি কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় মামলার রায় কার্যকর করতে এতো টালবাহানা করেছে। একারণে দীর্ঘ ১১ বছরেও মামলার রায় কার্যকর হয়নি।
নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের ছোট ভাই আব্দুস সালাম বলেন, মামলার আসামি নূর হোসেন হলো শামীম ওসমানের পালিত লোক, সে কার কথায় এ কাজ করেছে তা সবাই জানে। তাদের হাত অনেক লম্বা। যেকারণে বিচার পেতে সময় লাগছে।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, দন্ডপ্রাপ্ত আসামি কর্ণেল তারেক সাঈদ সহ অন্য আসামিরাও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের আত্মীয় স্বজন। এ মামলায় যদি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা হতো তাহলে শামীম ওসমান সহ র্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউলের নাম উঠে আসতো। তারাও এই ঘটনায় জড়িত ছিল। তাদেরকে সরকার রক্ষা করেছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ফলে শেখ হাসিনা সরকার এই রায়কে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেছে। অ্যাপিলেট ডিভিশনে যাতে শুনানি না হয় তা নিশ্চিত করেছে। তবে বর্তমান সরকার এই মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করলে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আবুল কালাম আজাদ জাকির বলেন, আসামি পক্ষ কোন সুবিধা করতে পারবে না। মামলাটি দ্রুত নিষ্পন্ন করার জন্য অ্যাটনি জেনারেল বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।
মতামত দিন